প্রচ্ছদ > আন্তর্জাতিক >

সিনওয়ারের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সম্পর্কে যা জানা গেল

article-img

সিনওয়ারও আগে ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে গুলি চালানোর সময় বাহুতে আঘাত পেয়েছিলেন বলে ময়নাতদন্তের তত্ত্বাবধানকারীর ধারণা। হামাস তার নেতার মৃত্যু নিশ্চিত করেছে। ইসরায়েলের জাতীয় ফরেনসিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক চেন কুগেলের মতে, হামাসের নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ার মাথায় বন্দুকের আঘাতে নিহত হয়েছেন। তিনি ময়নাতদন্তের তত্ত্বাবধানকারী ছিলেন।

 

নিউইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে একটি সাক্ষাত্কারে তিনি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন নিয়ে কথা বলেছেন।   

 

নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কুগেল জানিয়েছেন, একটি চোখা বস্তু সম্ভবত ছোট ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমে সিনওয়ারের বাহুতে আঘাত করেছিল। ফলে তার রক্তপাত শুরু হয়। তিনি রক্তপাত বন্ধ করতে একটি বৈদ্যুতিক তার ব্যবহার করে ক্ষতস্থান বাঁধার চেষ্টা করেন।

 

 কুগেল বলেন, ‘এই পদ্ধতি আসলে কোনো ক্ষেত্রেই কাজ করেনি। এটা খুব শক্তিশালী ছিল না এবং তার বাহু ভেঙে গিয়েছিল।’

 

সিনওয়ারের মৃত্যুসনদে সই করা ডা. কুগেল বলেছেন, ‘সিনওয়ারের মৃত্যুর কারণ মাথায় গুলির আঘাত। তার মাথায় একটি বুলেট ছিল এবং এতে মারাত্মক রক্তক্ষরণ হয়েছিল।

 

’ গত বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ হামাস নেতা ইয়াহিয়া সিনওয়ারের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এখন তার লাশ নিয়ে ভবিষ্যতে কী করা হতে পারে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। 

 

ইসরায়েলের জাতীয় ফরেনসিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. চেন কুগেল শুক্রবার দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে সাক্ষাত্কারে বলেছেন,  তিনি সম্পূর্ণ ময়নাতদন্ত তত্ত্বাবধান করেন এবং ময়নাতদন্ত শেষে সিনওয়ারের মৃতদেহ ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে লাশ কোথায় রাখা হয়েছে তা তিনি জানেন না। 

ইসরায়েল প্রায়ই ফিলিস্তিনিদের মৃতদেহ নিজেদের কাছে রেখে দেয়।

 

হামাস বা অন্যান্য সশস্ত্র গোষ্ঠীর সঙ্গে ভবিষ্যতের বিনিময়ে তাদের ব্যবহার করার আশায়। যেমনটা ইসরায়েলে হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলার সময় বা পরে নিহত জিম্মিদের মৃতদেহ নিয়ে করেছে।

 

সিনওয়ারের মরদেহ হামাসের কাছে দেওয়া হবে নাকি তাদের কাছে রেখে দেওয়া হবে, তা এখন দেখার বিষয়। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধের জবাব দেয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘ইসরায়েলি কর্মকর্তারা এমন কিছু করবে না যাার কারণে, মৃতদেহ দাফন করার পর তা একটি মন্দিরে পরিণত হয়।’ 

ওয়াশিংটনের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের মধ্যপ্রাচ্য প্রোগ্রামের পরিচালক জন বি অল্টারম্যান বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে কোনো গোপান স্থানে ইসলামি রীতিতে দাফন করা হবে। যখন বিন লাদেনকে হত্যা করা হয়েছিল, তখনও মুসলিম রীতিতে জানাজা হয়েছে।’  ওসামা বিন লাদেন ২০১১ সালে মার্কিন বাহিনীর হাতে নিহত হন এবং তরিঘড়ি করে তাকে সমুদ্রে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। সম্ভবত তার কবর যাতে মাজারে পরিণিত না হয়, তা এড়াতে এটা করা হয়েছিল। 

ডা.কুগেল অনুমান করেছেন, সিনওয়ারের ময়নাতদন্ত তার মৃত্যুর ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে হয়েছিল। কিন্তু তিনি সঠিক সময় নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি। তাকে সম্ভবত ইসরায়েলে কবর দেওয়া হবে। 

গত বুধবার ইসরায়েলি বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের পর সিনওয়ারের মৃতদেহ পাওয়া যায়। ঘটনার পরেই তার লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তখন তার আঙুল কেটে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ইসরায়েলে পাঠানো হয়েছিল। এরপর মৃতদেহও উদ্ধার করে ইসরায়েলে পাঠানো হয়। ওই বন্দুকযুদ্ধে আরো দুইজন নিহত হন।

সিনওয়ার ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি থাকার সময়ের প্রোফাইলের সঙ্গে এখন তৈরি করা ল্যাবরেটরি প্রোফাইল তুলনা করে এবং শেষ পর্যন্ত ডিএনএ শনাক্ত করা হয়।

কুগেল বলেছেন, প্রথমে সেনাদের তোলা ছবিগুলোর সঙ্গে তার দাঁতের মিল খোঁজার চেষ্টা করেন। কিন্তু তা পরিচয় শনাক্তে যথেষ্ট ছিল না। এরপর বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে সিনওয়ারের মৃতদেহ ফরেনসিক সেন্টারে নেওয়া হয়, যেখানে সম্পূর্ণ ডিএনএ পরীক্ষা হয়। কুগেল বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তারা শতভাগ নিশ্চিত হয়েছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিনওয়ারের মৃতদেহের যেসব ছবি ও ভিডিও  এসেছে সিএনএন তা যাচাই করে দেখেছে, প্রথমে তার বাম হাতে পাঁচটি আঙুল দেখা গেলেও পরের একটি অনুপস্থিত। 

২০১১ সালে বন্দি বিনিময়ের অংশ হিসেবে মুক্তি পাওয়ার আগে সিনওয়ার ইসরায়েলি কারাগারে দুই দশকেরও বেশি সময় আটক ছিলেন।

সূত্র : সিএনএন, নিউইর্য়ক টাইমস